[bangla_day], [english_date], [bangla_date], [hijri_date]
[bangla_day], [english_date]

হোলি আর্টিজানের মামলার রায়ে প্রতিক্রিয়া নেই সাইফুলের পরিবারের

হোলি আর্টিজানের মামলার রায়ে প্রতিক্রিয়া নেই সাইফুলের পরিবারের

শরীয়তপুর: হোলি আর্টিজানের মামলার রায়ে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে রাজি হননি সাইফুলের পরিবার। তবে সাইফুলের স্ত্রী দাবী করেন তার স্বামী জঙ্গী ছিলেন না। তিনি হোলি আর্টিজান রেস্তোরার পিজার শেফ কর্মচারী ছিলেন। বিষয়টি রায়ে পরিষ্কার হওয়া উচিৎ ছিল জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্ত্রী সোনিয়া বেগম।
নিহত সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া পৌরসভার কলুকাঠি গ্রামে। তিনি হলি আর্টিজানে পিজার শেফ কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই দিবাগত রাতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলুকাঠি গ্রামের মৃত আবুল হাসেম চৌকিদারের ছেলে ও ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরায় পিজা তৈরীর কুক সাইফুল ইসলাম চৌকিদার ঐ রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার শিকার হয়ে নিহত হয়। তার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর সাইফুলের স্বজনরা ঢাকায় গিয়ে লাশ ফেরত পাওয়ার জন্য যোগাযোগ শুরু করে। ওই বছরের ৬ জুলাই সাইফুলের লাশ ফেরত পাওয়ার জন্য গুলশান থানায় নড়িয়া পৌরসভা ও শরীয়তপুর-২ আসনের তৎকালিন সংসদ সদস্য কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী এমপির প্রত্যোয়ন পত্র জমা দেয়। তখন গুলশান থানা পুলিশ তদন্ত শেষ হলেই লাশ ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন। এর পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হুমায়ন কবীরের সাথে যোগাযোগ করার পর ডিএনএ টেষ্টের জন্য প্রথম সাইফুলে মাকে নিয়ে যেতে বলা হয়। ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আসার পর লাশ ফেরত পাওয়ার জন্য সাইফুলের পরিবারের পক্ষ থেকে সাইফুলের ভায়রা ভাই কবীর হোসেন স্বাক্ষর করে একটি আবেদন জমা দেন। এর পর সাইফুলের মায়ের ডিএনএ টেষ্টের টিপসহিসহ একটি আবেদ চাওয়া হলে তাও জমা দেয়া হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে সাইফুলের লাশ দাফন করা হয়। সাইফুলের ভায়রা ভাই কবীর হোসেনের দাবী ঐ দিন সকালেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ২৮ সেপ্টেম্বর তাদেরকে লাশ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ছিলেন।

সরেজমিনে বুধবার (২৭ নভেম্মর) বিকেলে কলুকাঠি গ্রামের বাড়িতে বসে কথা হয় সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, সাইফুল মারা যাওয়ার পর সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। সেলাই মেশিনে কাজ করে ও আত্মীয়-স্বজদের সহযোগিতা নিয়ে সংসার চালাই। তার সঙ্গে ঘড়ে বৃদ্ধ শাশুড়ি। কীভাবে মেয়েদের পড়ালেখা করাই, কীভাবে সংসার চলে, কেউ তো কোনও খবর নিতে আসেনি। উপরন্তু অনেকেই মনে করে আমার স্বামী জঙ্গি ছিল। না হলে সরকার আমাদের খোঁজ খবর নেবে না কেন? এ কারণে সাইফুলের বিষয়টি আজ রায়ে পরিষ্কার হওয়া উচিৎ ছিল।
তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে সামিয়া আক্তার (১২) নড়িয়া মডেল বিহারী লাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। ছোট মেয়ে জিদনি আক্তার কলুকাঠি মা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ও ছেলে হাসান চৌকিদারের বয়স এখন ৩ বছর ২ মাস । সাইফুল যখন মারা যায় তখন আমি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ওই অবস্থায় স্বামীর লাশ পাওয়ার জন্য অনেক ছোটাছুটি করেছি। সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শারীরিক, মানসিক আর আর্থিক হয়রানি ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। দাফনের আগে শেষ বারের মতো মুখটাও দেখতে পারিনি স্বামীর। তাকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে।

তিনি আরও বলেন, সাইফুলের নাম পরিচয় থাকার পরও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। সাইফুল জঙ্গি বা নির্দোষ যেটাই হোক না কেন, সরকার সেটা স্পষ্ট করে প্রকাশ করুক। কারণ আমরা এ অপবাদ থেকে মুক্তি চাই।
সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের মা সমমেহের বেগম (৭০) বলেন, আমরা বড় ছেলে সাইফুল। আমার সংসার চলতো তার রোজগারে। বড় ছেলেটা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন ছেলের বউ, নাতী, নাতনী নিয়ে সংসারে অনেক অভাব অনটন আছি। আমার ছেলেকে আল্লাহ্ যেন জান্নাতবাসী করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় পরে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করে পুলিশ।


error: Content is protected !!